আমি তখন ক্লাস সেভেনে ।
সকাল ১১.৩০ এ স্কুল ছুটি হয়েছে । তরি ঘড়ি করে বাসায় ফিরছি, কারন এমনিতেই প্রচণ্ড
ক্ষুধা তার ওপর আবার দুপুর ১.০০ টায় ক্রিকেট ম্যাচ । চৈত্রের প্রচণ্ড ক্ষরায় সাইকেল
চালিয়ে বাসায় ফিরছিলাম । পরিচিত এক হুজুরের সাথে দেখা, সে পাশ দিয়েই যাচ্ছিল । সালাম দিলাম তাকে,
উত্তরটা দিলেন তিনি না চেনার ভঙ্গিতে । কিছুক্ষণ পর তিনি আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকালেন এবং
বললেন, ‘তুমি আমাদের সারোয়ার না?’ । মজা করে বললাম, ‘দেখে কি অন্য কেউ মনেহয়?’ । পরক্ষনে তিনি
বললেন যে, আমাকে নাকি দেখে চেনার উপায় ছিলনা । প্রচণ্ড খরায়
চেহারার এই হাল হওয়াটাই সাভাবিক ।
চেহারার এই হাল হওয়াটাই সাভাবিক ।
অবশেষে বাড়ি ফিরলাম । ‘মা’
খাবার রেডি করে রাখতেন এই সময়ে । তড়িঘড়ি করে পোশাক পালটিয়ে খাবার জন্য প্রস্তুতি নিলাম । এমন
সময় একজন ভিক্ষুক এসে গেটে কড়া নাড়লেন । উনাকে চাউল দিলাম, কিন্তু সে তাতে অনিচ্ছা
পোষণ করলেন । চাউল বহন করার মত শক্তি তার নেই, তাই তিনবেলা কোথাও খাবার আর সামান্য
কিছু টাকা জুটলেই আর কিছু দরকার নেই এমনটাই বলছিলেন ব্রদ্ধ এই ভিক্ষুক । দেখে মনে হচ্ছিল
মানুষটি সারাদিন পেটে কিছু দেননি । তাই জিজ্ঞাসা করলাম তাকে ‘আপনার কি সমস্যা
হচ্ছে খুব?’ । বললেন সকাল থেকে এই দুপুর পর্যন্ত অনেক বাড়িতে গিয়েছি, কিন্তু কেউ
খাবার দেয়নাই । খুবই সংবেদনশীল মন আমার, বৃদ্ধের কথা শুনে আমার কণ্ঠস্বর স্তব্ধ
হয়ে গেল । দুনিয়ার মানুষ গুলো কি এতই নিষ্ঠুর । কোন মানুষই কি এই ক্ষুধার্ত বেক্তিকে
সামান্য ডাল-ভাত টুকু দিতে পারেনি? সেদিন থেকেই আমার আমার প্রথম ধারনা, ‘দুনিয়াটা বড়ই
অদ্ভুত’ ।
‘মা’ এর কাছে জিজ্ঞাস
করলাম যে, বারতি কোন খাবার আছে কি না । ‘মা’ বললেন দুপুরের রান্না হলে হবে । বৃদ্ধকে
দেওয়ার মত ঘরে তেমন কোন শুকনা খাবার ও ছিলনা । অবশেষে আমার জন্য রাখা খাবার
বৃদ্ধকে দেই । খাবার দেখে বৃদ্ধটি এতটাই উৎফুল্ল হয়েছিল যে, খাবার আগেই তার পেট
ভরেছে । সত্যি বলতে
বৃদ্ধের হাসি মাখা মুখ খানি দেখে যেন আমার ক্ষুধা পালিয়ে গেল । খাবার শেষে বৃদ্ধ
ভিক্ষুকটির চোখ বেয়ে পানি ঝরছিল এবং আমার মাথায় হাত বুলিয়ে আমার জন্য দোয়া করতে
থাকলেন । চলে গেলেন খাবার শেষে ।
দুনিয়ার মানুষ গুলো খুবই
নিষ্ঠুর এবং পাষাণ । এরা আমাদের দেশের বোঝা না যে এদের এড়িয়ে চলতে হবে । বরং আমাদের সভ্য
সমাজের উচিৎ তাদের জীবন মান উন্নয়নে বলিষ্ঠ ভুমিকা রাখা । দরিদ্রকে নির্মূল নয়, বরং দারিদ্রতাকে
নির্মূল করা আমাদের দায়িত্ব । এটাকে অন্য অবস্থানে অর্থাৎ সচ্ছলতায় রূপান্তর করা
জাতি হিসেবে আমাদের সকলের কর্তব্য । হয়তো আমি আপনি তাদের মুখে তিন বেলা খাবার তুলে
দিলাম । এতে কি তাদের জীবন মান উন্নয়ন হবে? কিন্তু যেখানে তাদের এক বেলা অন্ন
যোগান দিতে আমাদের স্বদিচ্ছা টুকু নেই সেখানে কল্পনা করাও দ্বায় যে, তাদের জীবন
মান উন্নয়নে জাতি হিসেবে আমরা কতটুকু ভুমিকা রাখতে পারবো ।
====== © Sarwar Hossain
====== © Sarwar Hossain
No comments:
Post a Comment